হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী ইতিহাস ও আকীদা বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয় হয়ে আসছে খিলাফত। কেউ এটিকে ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, আবার কেউ এর প্রমাণ ও ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সম্প্রতি আসাদউদ্দিন ইজীর বিখ্যাত গ্রন্থ আল-মাওয়াকিফ-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। গ্রন্থের শুরুতেই ইজী উল্লেখ করেন— ইসলামী বিধান নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতি হলো হয় নাস (স্পষ্ট কুরআন-হাদিসের দলিল) অথবা ইজমা (সম্মিলিত ঐকমত্য)-এর উপর নির্ভর করা। তার ভাষায়,
“যদি আমরা খিলাফত প্রমাণ করতে চাই— তা আমিরুল মু’মিনীন সম্পর্কেই হোক বা আবু বকর (রা.) সম্পর্কেই হোক— তবে অবশ্যই নাস বা সাহাবাদের ইজমা থাকতে হবে। কিন্তু নাসের ক্ষেত্রে—তা বিদ্যমান নেই।”
তিনি আরও বলেন, ইসলামী ইতিহাসে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আবু বকর, উমর, উসমান, আলী কিংবা ইবন আব্বাস (রাযি.)— কারও সম্পর্কেই কোনো স্পষ্ট নাস পাওয়া যায় না। এই অভাবকে তিনি “বিস্ময়কর” বলে অভিহিত করেছেন।
অন্যদিকে, কুরতুবীর তাফসিরে খিলাফতকে দ্বীনের একটি স্তম্ভ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়— মুসলমানদের নেতৃত্ব বা ইমামত আসলে খিলাফতই। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেক গবেষক— যদি খিলাফত সত্যিই দ্বীনের একটি স্তম্ভ হয়, তবে কেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি?
এ প্রসঙ্গে একজন সমালোচক মন্তব্য করেন—
“এটা কি নবীর তাজদীদ (নবীকরণ) নাকি নবীর প্রতি অসম্মান? নবী (সা.) দ্বীনের একটি মৌলিক স্তম্ভ নিয়ে কিছুই বলেননি— এ প্রশ্ন অস্বাভাবিক হলেও উপেক্ষা করা যায় না।”
এই মতবিরোধ শুধু ঐতিহাসিক বিতর্ক নয়, বরং বর্তমান মুসলিম বিশ্বেও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট দলিলের অভাব থাকলেও রাজনৈতিক প্রয়োজনে অনেক সময় এটিকে অপরিহার্য স্তম্ভ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ধর্মতত্ত্ববিদদের একাংশ মনে করেন— খিলাফতের ধারণা কুরআন ও হাদিসে সরাসরি না থাকলেও মুসলিম সমাজের ঐক্য ও শৃঙ্খলার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অন্যদিকে, সমালোচকরা বলেন— মৌলিক ধর্মীয় স্তম্ভ হিসেবে ঘোষণার আগে স্পষ্ট নাস থাকা অপরিহার্য।
খিলাফত আসলেই দ্বীনের একটি স্তম্ভ কিনা— এ প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে এ নিয়ে বিতর্ক যে সহজে থামছে না, তা আবারও প্রমাণিত হলো।
আপনার কমেন্ট